কোদালকাঠিতে। প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা
মানুষগুলোর চোখে মুখে ক্ষোভ। কাঁদতে কাঁদতে ওরা বিড়বিড়
করে। পেটে খিদা, খাবার নেই। আমার বাবা মরে গেছেন অনেক আগে।
মায়ের চিন্তা আমাদের সাত ভাই বোনের কী হবে। কোথায় গিয়ে
দাঁড়াব আমরা। চারদিকে নির্লজ্জ পাকিস্তানি হায়েনা ঘুরে
বেড়াচ্ছে। মনে পড়লে, এখনও আমার গা ঘেন্নায় রি রি করে ওঠে।
কদিন পরের কথা কোদালকাঠিতে মানুষের সংখ্যার আরো বাড়তে শুরু
করেছে। পেটে খিদা, খাবার নেই। কাজ নেই, মানুষের বাড়ি বাড়ি
কাজের খোঁজে বেরিয়েছি। কাজ পেলে খেয়েছি, না হলে না খেয়েই
দিন-রাত চলে গেছে। দিনটির তারিখ, বার মনে নেই জঙ্গলে
কচুরমুখী তুলছিলাম। সূর্য মাথার ওপর। একজন বয়স্ক মানুষকে
আমার দিকে আসতে দেখে দ্রুত চলে যাবার আগেই, লোকটি আমাকে
পিছু ডাকলেন।
এই মেয়ে শোন...। আমি ভয়ে ভয়ে দাঁড়িয়েছিলাম। লোকটিকে দেখে
যে ভয় পেয়েছিলাম, কথা বলার পর তা আর থাকেনি। মানুষটির নাম
মুহিফ হালদার। মুক্তিযোদ্ধা।
তোমার নাম কী মা?
মা ডাকটি শুনে আমি কেমন যেন মায়া অনুভব করি।
জি, আমার নাম তারামন।
শুনেছি তুমি নাকি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করো?
জি।
মা, তুমি আমাদের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে কাজ করবে? কাউকেই
খুঁজে পাচ্ছি না, তুমি যাবে মা আমাদের সাথে?
ক্যান?
আমরার জন্য কাজ করবা, ভাত রাঁইধা দিবা, কী পারবা না মা?
কোথেকে যেন একটা শক্তি পেলাম, মনে হলো এই তো সুযোগ। মাথার
উপর রক্ষা করার মতো কেউ তো নেই। যার ভরসায় বেঁচে থাকব।
মরতে তো হবেই। তাছাড়া যুদ্ধ করে বাঁচার চেষ্টা করলে দোষের
কী? কিন্তু আমার নিরাপত্তা? তাই মুহিফ হালদারকে আমি
বলেছিলাম আফনে আমরার মার লগে কথা বলুন, উনি যাইবার দিলে
যাইমু।
সেই সন্ধ্যায়, আজিজ মাস্টারসহ মুহিফ হালদার আমাদের মায়ের
সাথে দেখা করেন। আজিজ মাস্টারের কথায় মা ভীষণ ঘাবড়ে গেলেন!
‘ক্যাম্পে নিয়া যাবার চান, এই মেয়ের তো কোনো দিন বিয়া হইবে
না? মেয়ে যদি মইরা যায় তাইলে তো যন্ত্রণাই শ্যাষ, যদি না
মরে তাইলে...। মা আজিজ মাস্টারকে বলেছিলন্ধ দ্যাশ স্বাধীন
হইবে তো? আমার মাইয়ারে নিয়ে যাবার চান! কিন্তুক কীভাবে
নিয়া যাবেন কন?
আজিজ মাস্টার আমাকে ধর্ম মেয়ে করে নেন। শুধু বিশ্বাসের ওপর
আমরার মা আমাকে মুহিফ হালদার ও আজিজ মাস্টারের সাথে যেতে
দেন। আমি মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে চলে যাবার আগে মা বলেছিলেন
বাই গো দেইখ্যান আমরার মাইয়াডার ইজ্জত যেন না যায়! মুহিফ
হালদার আমার জন্য কয়েক জোড়া সালোয়ার-কামিজ চেয়ে নিয়েছিলেন
কারো কাছ থেকে, সেগুলোই তখন আমার যুদ্ধের পোশাক। চলে গেলাম
মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে। মুক্তিযুদ্ধে। কোদালকাঠিতেই আমার
প্রথম ক্যাম্প জীবন শুরু হয়। রান্না করা, ডেক ধোয়া, অস্ত্র
পরিষ্কার করা। যে-ই ওজন একেকটার! তারপরও এই দুই হাতে
সেগুলো উঠিয়ে লুকিয়ে রেখেছি। আজিজ মাস্টার একদিন বললেন, নদ
পার করে পাকিস্তনি ক্যাম্পের খবর আনতে হবে। কোনো পুরুষ
যেতে পারবে না। যেতে হবে আমাকে। তাও আবার নদ সাঁতরে, রাতের
অন্ধকারে। কথাগুলো শুনেই কইলজাটা চিন চিন করে উঠল।
ব্রহ্মপুত্রের আরেক ঘাট খাড়বাজ। তথ্য আনতে যেতে হবে
সেখানে। রাজি হয়ে গেলাম, যা থাকে কপালে। বুকের নিচে একটা
কলাগাছ দিয়ে পরনের কাপড় যতটুকু কমানো যায় কমিয়ে রাতের
অন্ধকারে নেমে পড়লাম ব্রহ্মপুত্রে। সারারাত সাঁতরে ভোরে
জঙ্গলে লুকিয়ে থাকতাম। তারপর নিজেকে পাগলির বেশভূষায় নোংরা
ময়লা ছেঁড়া কাপড় পরে চলে যেতাম শত্রুর ক্যাম্পে। কুত্তার
বাচ্চারা আমাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখত। উর্দু ভাষায় কথা
বলাবার চেষ্টা করত। তবে আমি কথা বলতাম না। পাগলামির অংশটা
আরেকটু বাড়িয়ে দিতাম। ওরা আমাকে নিয়ে খেলা করত, বিরক্ত
করত, তবুও আমাকে কথা বলাতে পারেনি। ক্যাম্পে যখন আমার মতো
মেয়েদের কান্নার শব্দ শুনতে পেতাম তখন মনে হতো চিৎকার করে
ওদের গালি দেই। কিন্তু করতাম না, শুধু দ্যাশটার কথা
ভাবতাম। চুপচাপ বুকের কষ্ট বুকে চেপে ধরে অন্যপথে এগিয়ে
যেতাম। ওদের এলএমজি, রাইফেল, বাহিনী, সব জেনে আবার নদ
সাঁতরে চলে আসতাম আমাদের ক্যাম্পে।
মুক্তিযুদ্ধের সেই দিনগুলোর সবচেয়ে করুণ স্মৃতি আমি আজও
ভুলতে পারিনি। মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প থেকে আমার খালার বাড়ি
কাছেই ছিল। কেন যেন দেখতে ইচ্ছে করছিল ওদের। তাই রাতের
অন্ধকারে চলে গেছিলাম খালার বাড়িতে। রাত পার করে ভোর হবে
হবে, আমি চলে যাবার জন্য রেডি হয়েছিলাম, তবে খালা যেতে
দিতে চাইলেন না। খালু সকালবেলা কোরআন পড়ছিলেন। এমন সময়
কুত্তার বাচ্চারা কোথেকে যেন খবর পেয়ে চলে আসে খালার
বাড়িতে। আমি দ্রুত পালিয়ে যাই। জঙ্গলের মধ্যে কোনোভাবে
লুকিয়ে জান বাঁচিয়েছিলাম সেদিন। তবে খালু বাঁচেনি। ওরা
কোরআন শরিফের ওপর মারল একটা লাথি। খালুর বুকের ওপর পা
চড়িয়ে গুলি করে। বুঝলাম খালু শেষ। কিছুই করার নেই আমার,
শুধুই দেখছি। খালা কোথায় যে পালিয়ে গেলেন, জানা গেল না। ওই
দিন কোদালকাঠিতে ওই গ্রামের খোরশেদ মুন্সি, বাদশা দেওয়ানি,
মোকসা দেওয়ানি, হেলাল বেপারিকে মেরে ফেলে ওরা।
শ্রাবণ-ভাদ্র মাস। মুহিফ হালদার আমাকে দশগরিয়া নিয়ে এলেন।
বেশ কিছুদিন থাকলাম ওখানে। অস্ত্র চালানো শিখলাম, স্টেনগান
হাতে নিয়ে আলফা দেয়া শিখলাম। একদিন দুপুর বেলা। ভীষণ
বৃষ্টি হচ্ছে। ক্যাম্পের সবাই আমরা ভাত খাচ্ছিলাম। এমন সময়
পিছল্যা গাছে আজিজ মাস্টার আমাকে উঠতে বললেন। সুপারি গাছের
মাথায় উঠে দূরবীন দিয়ে নদীর দিকে দেখতেই চোখ দুটো বড় বড়
হয়ে গেল। গান বোট নামিয়ে দিয়েছে শত্রুরা। চিৎকার করে
উঠলাম, আবার সর্বনাশ, আবার সর্বনাশ। কিসের আর ভাত খাওয়া।
আমরাও আমাদের অবস্খান শক্ত করলাম। শুরু হলো গুলি। বৃষ্টির
মতো গুলি চলেছিল সন্ধ্যা পর্যন্ত । আমি কখন যে স্টেনগান
নিয়ে গুলি চালানো শুরু করেছি খেয়াল করিনি। আমার একটা গুলি
যখন ওদের একজনের গায়ে লাগল, সেই মুহূর্তে আমি সবচেয়ে খুশি
হয়েছিলাম। কনুই আর পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে আলফা করে কত
জায়গা যে পেরিয়ে গেছি। কনুই, পায়ের পাতা কেটে রক্ত বের হয়ে
ঘা হয়ে গেছিল তাও থামি নাই। স্বপ্ন একটাই, আমরা স্বাধীন
হব।
দশগরিয়ার পর আমি যাই কেতনতারিতে। এতদিনে পাকিস্তানিরা
বিমান শেলিং শুরু করে দিয়েছিল। বিশাল বিশাল সব বিমান। আকাশ
থেকে দশ বারোটা করে বোমা ফেলে চলে যায়। গ্রামের পর গ্রাম
পুড়ে শেষ। থাকার কোনো জায়গা নেই। আজিজ মাস্টার বাঙ্কার
কাটার নির্দেশ দিলেন। এক রাতের মধ্যেই পনেরো ফুট বাই বারো
ফুট বাঙ্কার কেটেছিলাম আমরা। সেখানেই দিনের আলোতে লুকিয়ে
থাকা। প্রতিদিন বিমান আসে বোমা ফেলে চলে যায়। শেলিংয়ের
শব্দে বাঙ্কারের মাটি ধসে যেতে শুরু করেছিল। তারপরও
সেখানেই লুকিয়ে থাকতে হয়েছিল আমাদের।
দশ কি পনেরো দিন পরের কথা। আগুন (অগ্রহায়ণ) মাসের শেষ
দিকে। দুপুরের দিকে একটি বিমান এলো, তবে বিমানটা দেখতে
একটু অন্যরকম। পতাকা লাগানো। আমরা চিন্তা করেছিলাম, যা হয়
হবে, গুলি ছুড়ব। মুহিফ হালদার বাধা দেন। বিমানটি আমাদের
মাথার ওপর কয়েক চক্কর দিয়ে চলে যায়। আজিজ মাস্টার বললেন
দেশ স্বাধীন হইছে। পাকিস্তানিরা যুদ্ধে হেরে গেছে। রেডিওতে
স্বাধীনতার ঘোষণা শোনার পর কেমন যেন মনে হলো, বুঝলাম না।
তবে চোখের দুই দিক বেয়ে পানি পড়ছিল এটা মনে আছে।
স্বাধীনতার পর আমার জীবনে শুরু হলো আরেক গল্পের। রাজিবপুর
ফিরে আসলাম। আম্মা, ভাইবোনদের খুঁজে পেলাম। থাকার জায়গা
নেই। খাবার নেই। চরে ঘর বাঁধলাম আমরা। কাজ নিলাম মানুষের
বাড়িতে। তবে স্বপ্নপূরণ হয় না। আমার বড় বোনগুলোর বিয়ে হয়
আমার হচ্ছিল না। কারণ মেয়ে ক্যাম্পে ছিল। মেয়ে ভালো না।
মেনে নিলাম। হঠাৎ একদিন আব্দুল মজিদ নামের একজন সহজ-সরল
মানুষ আমাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয় আমার আম্মাকে। আম্মাও
রাজি হয়ে যান। তখন ১৯৭৫ সাল। একশ এক টাকা দেনমোহরে আমার
বিয়ে হয় আব্দুল মজিদের সাথে। চরেই শুরু হলো আমাদের জীবন।
চর ভাঙে, আমার ঘর ভাঙে। আবার ঘর বানাই। আবার চর ভাঙে।
এভাবেই চলে যায় চব্বিশটা বছর।
১৯৯৫ সাল। মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে সরকারি লোক
আসে আমার খোঁজে। ইন্টারভিউ নেয়। প্রমাণ জানতে চায় আমার
মুক্তিযোদ্ধা হবার। সব জানা শেষ হলে তারা চলে যায়।
ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের শিক্ষক বিমল কান্তি আমাকে সাহস
দেন। বলেন, আপনি মুক্তিযোদ্ধা, আপনাকে দেশ স্বীকৃতি দেবেই।
তবে এর আগে চিহ্নিত করতে হবে। দুঃখ লাগে আমি মুক্তিযোদ্ধা
অথচ তারপরও আমাকে চিহ্নিত করতে হবে। ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়
আমাকে। প্রেসক্লাবে প্রশ্নে প্রশ্নে আমাকে একরকম বিরক্ত
করা হয়েছিল। তবুও চুপ করে থেকেছিলাম কারণ আমি মুক্তিযোদ্ধা
এ তথ্য সত্যি হওয়া দরকার।
পঞ্চাশোর্ধ্ব তারামন বিবি ঘুম থেকে ওঠেন ভোর পাঁচটায়। কখনো
আরও আগে। ঘুম থেকে ওঠার পর ওজু করেন। ফজরের নামাজ আদায়
করেন। বড় ছেলের বউকে সাথে নিয়ে শুরু করেন গৃহস্খালীর
কাজকর্ম। সবসময় নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করেন তিনি। চুলা
জ্বালাবার পর বাড়ির সবার জন্য ভাত রান্না করা হয়। ভাতের
সাথে সবসময়ই আলু ভর্তা, কখনো আগের রাতের তরকারি, আবার
মুরগির ডিম থাকে। ছেলেটা রুটি পছন্দ করে তাই মাঝে মধ্যে
রুটি, চা, ডিম দিয়ে নাশতা করেন তারামন বিবি। দুটি গাই গরু
আছে। তাঁর নিজের নাশতা করার আগে গরুগুলোকে বিচালি খেতে
দেন। ওনার বাড়ির সামনে বিচালির গাঁদা করে রেখেছেন। স্বামী
আব্দুল মজিদ তারামন বিবির সব কাজে সাহায্য করেন।
সকালের নাশতা শেষ করে দুপুরের রান্নার আয়োজন শুরু হয়।
দুপুরে একটু ভালো খাবার পছন্দ করেন তারামন বিবি। দুপুরের
খাবার মেন্যুতে মসুরের ডাল মাস্ট। তার সাথে যেকোনো তরকারি।
গরুর মাংস, মুরগির মাংস, খিচুড়ি তাঁর প্রিয় খাবার। সবচেয়ে
প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে গ্রামের সাধারণ মানুষদের
পছন্দ কচুরমুখী। পোলাও মাংস পছন্দ করেন তারামন বিবি।
খাবারের তালিকায় অনেকগুলো নামের মধ্যে চাইনিজ কখনো খেয়েছেন
কি? প্রশ্নে তারামন উত্তর দিলেন এই খাবারটার নাম শুনেছি
কোনোদিন খাইনি। দুপুরের খাবারের পর তারামন স্বভাবসুলভ
বিশ্রাম নিতে চাইলেও পারেন না। গ্রামের প্রয়োজনে, মানুষের
প্রয়োজনে তাকে যেতে হয় এর ওর বাড়িতে। কারো সংসারে ঝগড়া
বিবাদ হয়েছে সেখানে তারামন বিবিকে দরকার। বিচার শালিস করতে
হবে। দোষী ব্যক্তির শাস্তি দিতে হবে। গ্রামের মানুষগুলো
ভীষণ সহজ সরল। ওরা তারামনের প্রতিটি সিদ্ধান্ত মেনে নেন।
যেদিন বিচার শালিস থাকে না সেদিন আশিষকে নিয়ে খেলা করেন
তিনি। আশিষকে তেল মাখিয়ে দেন। আশিষের শরীর ম্যাসাজ করে
দেন। পুকুরে মাছ চাষ করেন তারামন বিবি পরিবার। সাত কাঠার
ছোট্ট পুকুরটিতে মাছ ছেড়েছেন হরেকরকম। রুই, কাতলা,
তেলাপিয়া, মিরর কার্প, সিলভার কার্প। বাড়িতে মেহমান
উপস্খিত হলে বাড়ির পুকুরের মাছ প্রথম ব্যবস্খাতেই রাখেন।
সন্ধ্যার আগে চা-নাশতা করতে পছন্দ করেন তিনি। বেশ কড়া
লিকারের দুধ চা পছন্দ তার। টেলিভিশন দেখতে খুব ভালো লাগে
তারামন বিবির। টেলিভিশনের সব অনুষ্ঠান দেখেন না, তবে
বিটিভির সাপ্তাহিক নাটক, আর প্রতিদিন সংবাদ দেখেন তিনি।
রাত ৮টায় সংবাদ মিস করেছেন এমন কখনো ঘটেনি।
বিনোদনের সঠিক সংজ্ঞা জানা নেই তার। তারপরও বিনোদন বলতে যা
বোঝালেন, তাতে বিনোদন নামটা মজার একটি দর্শন পায়। বিনোদন
বলতে তেমন কিছুই নেই তার। সারাদিনের সমস্ত কাজ, বিচার
শালিস, পুকুরে মাছের খাবার দেয়া, মিটিং মিছিলে যাওয়া
এগুলোই তাঁর বিনোদন। গান শুনতে ভীষণ পছন্দ করেন তারামন
বিবি। পছন্দের শীর্ষ তালিকায় রয়েছেন সাবিনা ইয়াসমীন, রুনা
লায়লা, সৈয়দ আব্দুল হাদী। দেশের গানের ক্যাসেট সংগ্রহ
করেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি আসক্তিও রয়েছে তাঁর। তার
জোছনা রাতে বাড়ির উঠোনে বসে আজ জোছনা রাতে সবাই গেছে বনে
গানটা শুনতে তাঁর খুব ভালো লাগে।
ধানের চাষ করেন তারামন বিবির স্বামী আব্দুল মজিদ। নিজেদের
কিছু আর আদি নিয়ে প্রতি সিজনে ত্রিশ, পঁয়ত্রিশ মণ ধান ওঠে
ঘরে। সেগুলো নিয়েই বছর শেষ হয়ে যায়। বীরপ্রতীক পদবির জন্য
তারামন বিবি মেয়ের জামাইকে চাকরি নিয়ে দিয়েছেন গণপূর্ত
মন্ত্রণালয়ে। ছেলের হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়ের চাকরি। সরকারের
কাছ থেকে ভাতা পান প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা। এগুলো দিয়েই
সংসার চলে তাঁর। নাতি আশিষকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন তারামন
বিবির। আশিষ একদিন অনেক বেশি বেতনের চাকরি করবে। আর ওদের
কারো জীবনে তখন কোনো কষ্ট থাকবে না।
বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি অন্যের অনুকম্পা, অনুগ্রহ
চান না। চান শুধু ভালোবাসা। নিরেট ভালোবাসা। আর সজাগ
দৃষ্টি। |